আমাদের আরো ভাবতে হবে। ভাবতে হবে যে আগুন সবকিছু পুড়িয়ে ফেলতে পারে, সেই আগুন দিয়েই আমরা রান্না করি। এতেই হিসাবটা সহজ হয়ে যায়, আমরা আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু যখনই আমরা উদাসীন তখনই বড় বিপদগুলো ঘটে যাচ্ছে। আগুন লাগার পর ফায়ার ফাইটারদের আসতে যে সময় নিয়েছিল, গলির কারনে গাড়ি ঢুকতে না পারা সহ জ্যাম মিলিয়ে যে সমস্যা হচ্ছিল বা হয় সেই বিষয়টি আমাদেরকে বুঝতে বা মানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে এভাবে হবে না কেবল। কেবল ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির জন্য পথ চেয়ে বসে থাকলে চলবে না। গাড়ি আসতে যদি ১০ মিনিট সময়ও নেয়। তবে সেই স্ময়ে আগুন ভয়াবাহ অবস্থার দিকে যাবে। তাই অগ্নি নিবারকের গাড়ির আশায় বসে থাকলে কেবল হবে না, বিশেষ করে পুরানো ঢাকার এত সরু গলিতে বসবাস করা মানুষদের বিষয়টি বা শহরগুলোর অন্য এলাকাগুলো একই অবস্থা। চাইলেই গলি বড় করা সম্ভব না। বাস্তবতাকে বুঝতে হবে। বুদ্ধি বের করতে হবে। আগুন সব পুরিয়ে ফেলে, সেই আগুনকে আমরা সাপ বশ করার মতন নিয়ন্ত্রণ করে তা দিয়ে রান্না করি।
প্রতিটা ছাদে ১০০ ফিট পাইপ রাখতে পেঁচিয়ে, পানির টাংকির সাথে যোগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে ছোট আরেকটি নীচে চাকা যুক্ত প্রটবল টাংকি থাকতে হবে মূল টাংকির সাথে লিংক রেখ বা চাকা ছাড়াও হতে পারে। যাতে সব সময় পানি থাকবে, মানে নিচের রিজাভ টাংকি থেকে আগে এখানে পানি এসে তারপর ছাদের বড় টাংকিতে পানি উঠবে। এতে এই ছোট টাংকিতে সব সময় পানি থাকবে। ফলে যে কোন বিপদে প্রটবল টাংকিকে ছাদের যেখানে খুশি টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে বা এতে পানি থাকায় তা দিয়ে বিপদে কাজে লাগান যাবে সেই বিল্ডিং বা তার আশেপাশের বাড়িতে আগুন লাগলে। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি আসতে আর তাদের পরিস্থিতি বুঝতে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে মিনিমাম ২০ থেকে ৩০ ঘণ্টা সময় লাগে। আমি নিজে দুইবার পুরো বিষয়টি দেখেছি আজ থেকে বহু কাল আগে। একবার আমি নিজে আমার অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার নিয়ে ছুটে গেছি। তখন রাত ছিল। গাড়ি আসতে সময় নিয়েছিল প্রায় ২০ মিনিট। তারপর তারা রাতের বেলা বুঝতে পারছিল না কিভাবে কি করবে, এতে সময় যাচ্ছে। সময় নিল তারা ১০ মিনি্টের কাছাকাছি। আগুন বসে নেই, আগুন ১ থেকে ২। ২ থেকে ৪, ৪ থেকে ৮ , ৮ থেকে ১৬ বেগে যেন দৌড়াচ্ছিল। কিন্তু জায়গাটা আমাদের চেনা বলে কি করতে হবে এটা কিছুটা বুঝতে পেরেই শুরুতেই আমি আমার অগ্নি নিবারক সিলিন্ডারটি কাজে লাগিয়ে ছিলাম। অন্যরা বালতিতে করে পানি ছুঁড়ে মারছিল। তাতে যথেষ্ট না হুলেও বেশ কাজ হয়েছিল। তা না হলে আরো ভয়াবাহ হতে পারত। তাই আগে নিজের বল কাজে লাগাতে হবে। গাড়ি আসতে আসতে তাদের বুঝতে বুঝতে, ব্যবস্থা নিতে নিতে অনেক সময়। যদি সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটও হয়, তবুও আগুনের জন্য তা মহা সুখের। সে ইচ্ছে মতন চাবিয়ে খেতেই থাকবে, যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতির কারন হবে। তাই আগে নিজেদেরটার বিষয় সচেতন থাকতে হবে। বল বল আপনা বল।
প্রত্যেক বাসায় ৫০ থেকে ১০০ ফিটের পাইপ থাকতেই হবে। ছাদের টাংকি ছাড়া যে কোন ফ্ল্যাট থেকেও পানি ত দেওয়া যেতে পারে। ছাদে ছোট আরেকটি টাংকি থাকতে হবে। আর প্রত্যেক গলিতে বা ছোট রোডগুলোতে ৩ ইঞ্চির একটি ইমারজেন্সি পাইপ ড্রেনের পাশ দিয়ে রাখতে হবে। আর তা প্রতি ৫০ ফিট পর পর একটি মুখ থাকবে। যাতে গলিতে যদি ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি গলিতে ঢুকতেও না পারে, এই পাইপ দিয়ে গাড়ি থেকে পানি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। প্রত্যেক এলাকায় মসজিদে, মন্দিরে বা স্কুলে ছোট একটি রিক্সা চালিত ভ্যান বা মটোর চালিত গাড়ি থাকতে পারে। যাতে পানির একটি টাংকি থাকতে পারে, সাথে ১০০ফিটের পাইপ। থাকতে পারে সাথে একটি পানির পাম্প আর ছোট একটি পেল্টল চালিত জেনেরেটর, যা কাজে লাগিয়ে উঁচুতে পানি ছুঁড়ে দেওয়া যায়। আসা করি আমার এই চিন্তাটা কাজে আসবে। আমি এই নিয়ে আগেও বিভিন্ন জায়গায় লিখেছি।
Comments
Post a Comment